টপ ২০ সিএ ফার্ম বাংলাদেশ-(Top 20 CA Firm in Bangladesh)-২০২৫
সিএ ফার্মে আর্টিকেলশিপ শুরু করার আগে, অনেকেই বাংলাদেশের সেরা সিএ ফার্মগুলোর একটি তালিকা বা র্যাংকিং জানতে চান। তবে শুরুতেই স্পষ্ট করে বলা যাক, সরকারি বা বেসরকারি কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে সিএ ফার্মগুলোর র্যাংকিং করে না।
তাহলে সিএ ফার্মের র্যাংকিং কি বা র্যাংকিং কীভাবে হয়?
কোন ফার্ম কত নম্বরে আছে, তা মূলত ব্যক্তি বিশেষের অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে। তাই এই বিষয়টি কিছুটা আপেক্ষিক। সাধারণত, একটি ফার্মের ক্লায়েন্ট সংখ্যা, রিসোর্স (দক্ষ জনবল, আধুনিক প্রযুক্তি ইত্যাদি), সুনাম এবং কাজের ধরনের ওপর ভিত্তি করে অনেকে একটি ফার্মকে অন্যটির তুলনায় এগিয়ে রাখেন। এখানে ব্যক্তিগত পছন্দ এবং অভিজ্ঞতার একটি প্রভাব থাকে।
ইন্সটিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ বাংলাদেশ (ICAB)-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ২৩৫টি সিএ ফার্ম রয়েছে। এর মধ্যে ৪১টি ফার্ম বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অডিট করার জন্য অনুমোদিত। পাশাপাশি, ১৫৬টি প্রতিষ্ঠান এনজিও অডিট করার অনুমতিপ্রাপ্ত।
সিএ ফার্মে যোগদানের আগে অন্যান্য বিবেচ্য বিষয় (Which institute / Firm is best for CA in Bangladesh?):
ফার্মের কর্মদিবস (Working Days): কিছু ফার্ম সপ্তাহে ৬ দিন অফিস করে, আবার কিছু ৫ দিন। যারা পড়াশোনার জন্য বেশি সময় চান, তাদের জন্য ৫ দিনের কর্মদিবসযুক্ত ফার্ম সুবিধাজনক হতে পারে।
ফার্মের সুনাম: ফার্ম নিয়মিত অ্যালাউন্স (ভাতা) প্রদান করে কিনা, পরীক্ষার সময় ছুটি দেয় কিনা, পর্যাপ্ত সংখ্যক যোগ্যতাসম্পন্ন (Qualified) স্টাফ আছে কিনা এবং ক্লায়েন্ট বেস কতটা ভালো – এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা জরুরি।
বিগ ফোর সিএ ফার্ম (Big 4): সুযোগ পেলে বিগ ফোরের কোনো একটি ফার্মে জয়েন করা উচিত। বিগ ফোর (Big Four): এই শব্দবন্ধটি বিশ্বব্যাপী চারটি বৃহত্তম অ্যাকাউন্টিং ফার্মকে নির্দেশ করে, যারা তাদের খ্যাতি এবং সেবার মানের জন্য সুপরিচিত। বাংলাদেশেও এই ফার্মগুলোর কার্যক্রম রয়েছে:
ডেलয়েট (Deloitte): বাংলাদেশে “নুরুল ফারুক হাসান এন্ড কোং” এর সাথে অ্যাফিলিয়েটেড। বিশ্বব্যাপী তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক এবং বিভিন্ন প্রকার ক্লায়েন্ট রয়েছে। বাংলাদেশে তারা ঢাকা (গুলশান ও মহাখালী) এবং চট্টগ্রামে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। ওয়েবসাইট: https://www.deloitte.com/bd/en/offices/bangladesh-offices.html
কেপিএমজি (KPMG): বাংলাদেশে “রহমান রহমান হক এন্ড কোং (RRH)” নামে পরিচিত। বাংলাদেশে এটি প্রথম “বিগ ফোর” ফার্ম হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। তারা অডিট, ট্যাক্স এবং অ্যাডভাইসরি সহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে। তাদের ঢাকা এবং চট্টগ্রাম উভয় শহরে অফিস রয়েছে। ওয়েবসাইট: https://kpmg.com/bd/en/home/about/kpmh-in-bangladesh.html
PwC এবং EY: বাংলাদেশে এই দুটি “বিগ ফোর” ফার্মে্র সরাসরি কার্যক্রম থাকলেও তাদের আপাতত কোনো অ্যাফিলিয়েটেড ফার্ম নেই। তাই এই ফার্ম দুটিতে আর্টিকেলশীপ নেয়ার সুযোগ নেই। এই বিষয়ে আরও নিশ্চিত তথ্যের জন্য তাদের ওয়েবসাইট বা স্থানীয় অফিসের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
কাজের বিভাগ (Team Allocation): বড় ফার্মগুলোতে একেকজন পার্টনার আলাদা আলাদা বিভাগ তত্ত্বাবধান করেন। সাধারণত, একজন শিক্ষার্থী যে প্রিন্সিপালের অধীনে যোগদান করেন, তিনি সেই প্রিন্সিপালের তত্ত্বাবধানে থাকা সার্ভিসগুলোতে কাজ করার সুযোগ পান।
উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি ফার্মে অডিট, ট্যাক্স, কনসালটেন্সি ইত্যাদি বিভিন্ন বিভাগ থাকে এবং কোনো পার্টনার শুধু ট্যাক্স নিয়ে কাজ করেন, তাহলে তার অধীনে যোগদানকারী শিক্ষার্থীদের পুরো আর্টিকেলশিপের সময় ট্যাক্স সংক্রান্ত কাজ করার সুযোগ বেশি থাকবে।
যদি সম্ভব হয়, এমন কোনো পার্টনারের অধীনে যোগদান করা ভালো, যার কাছে বিভিন্ন ধরনের ক্লায়েন্ট রয়েছে।
ফার্মের বিশেষীকরণ: কিছু ফার্ম নির্দিষ্ট শিল্প বা সেবার উপর বেশি মনোযোগ দেয়। আপনার আগ্রহ এবং ক্যারিয়ার লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ফার্ম নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়ন: ফার্মটি শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ এবং পেশাদার উন্নয়নে কতটা গুরুত্ব দেয় তা জেনে নেওয়া উচিত।
কর্মপরিবেশ: ফার্মের সংস্কৃতি এবং কর্মপরিবেশ সম্পর্কে ধারণা নিতে পারলে আপনার জন্য কাজ করা সহজ হবে। সম্ভব হলে বর্তমান বা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলুন।
অবস্থান: আপনার বাসস্থান এবং যাতায়াতের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ফার্মের Location নির্বাচন করা উচিত।
বড় ফার্ম নাকি ছোট ফার্ম?
অনেক শিক্ষার্থী বড় ফার্মের কাজের চাপ বিবেচনা করে তুলনামূলকভাবে কম কাজের চাপযুক্ত ছোট ফার্মে যোগদান করতে চান। তাদের ধারণা, এতে পড়াশোনার জন্য বেশি সময় পাওয়া যাবে। এই ধারণা অমূলক নয়।
তবে, সিএ পেশায় হাতে-কলমে কাজের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত মূল্যবান। শুধু পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি ভালোভাবে কাজ শিখতে পারলে, কম কাজ শেখা শিক্ষার্থীদের তুলনায় ভবিষ্যতে অনেক এগিয়ে থাকা যায়।
বড় ফার্মগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করার সুযোগ থাকে, যা কর্মক্ষেত্রে একটি broad exposure দেয়। ফলে, বাজারে পরিচিতি ও সুনাম রয়েছে এমন ফার্মে যোগদান করা সাধারণত উত্তম। এটি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি ব্র্যান্ড ভ্যালু হিসেবে কাজ করে।
ফলাফল, সুযোগ-সুবিধা, সুনাম, রিসোর্স এবং ক্লায়েন্টবেস ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে, নিচে ২০টি ফার্মের একটি তালিকা দেওয়া হলো (এটি কোনো আনুষ্ঠানিক র্যাংকিং নয়, বরং বিভিন্ন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে একটি উপস্থাপনা):
Rahman Rahman Huq (KPMG)
ACNABIN
Nurul Faruk Hasan & Co
Hoda Vasi Chowdhury & Co
Syful Shamsul Alam & Co
A. Qasem & Co
M J Abedin & Co
S F Ahmed & Co
Ahmed Zaker & Co
MABS & J Partners
